• বাংলাদেশ

    জেলা রেজিস্ট্রার পদোন্নতির জন্য উর্ধ্বতন মহলে অর্ধকোটি ঘুষ, বাহাউদ্দিন নাছিমের আশীর্বাদপুষ্ট দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল খোরশেদের দলিলবাণিজ্য ও নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক ‎

      নিজস্ব প্রতিবেদক ৫ নভেম্বর ২০২৫ , ১০:৩৬:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    * আওয়ামীলীগ সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন নাছিমের ঘনিষ্ঠজন সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল খোরশেদ।

    ‎* অতি শীগ্রই ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির জন্য অর্ধ কোটি টাকা বড় বড় টেবিলে দেনদরবারও করেছেন।

    ‎* উক্ত দপ্তরে দলিল রেজিস্ট্রেশনের সরকারি ফি নির্ধারিত থাকলেও অতিরিক্ত টাকা নিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়।

    সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ভবনের ইটেও টাকা চায়। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। যাঁরা আসেন তাঁরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েই আসেন। এখানে ফেরেশতা আসলেও টাকা দিতে হবে।’ ক্ষোভের সঙ্গে এসব কথা বলছিলেন দক্ষিণ  কেরানীগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা আরেফিন সোহাগ। তিনি জানান, ‘তাঁর শ্বশুর তিন মেয়ের নামে তেঘরিয়া এলাকার সাড়ে চার কাঠা জমি লিখে দেবেন। দলিল লেখক, অফিস চালানোর খরচ, তাছাড়াও সাব-রেজিস্ট্রারের জন্য আলাদা করে মৌজা রাউন্ড ফিগার দলিল প্রতি লাখে ৫০০-১০০০ টাকা ঘুষ চেয়েছেন দলিল লেখক ও অফিস মোহরার’।

    ‎সরেজমিনে দেখা যায়, জমির ক্রেতা-বিক্রেতা, দলিল লেখকদের নির্দিষ্ট দালালের আনাগোনা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দালালেরা নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে সহজেই জমি নিবন্ধনের কাজ করিয়ে দেন। কাগজপত্রে সমস্যা থাকলেও ঠিকমতো যাচাই করা হয় না আর দালাল ছাড়া গেলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। উক্ত দপ্তরে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে জাল দলিল তৈরির চক্রও এখানে সক্রিয়। ভূমি নিবন্ধনের দায়িত্ব সাব-রেজিস্ট্রারের। সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়-গুলো দেখভাল করে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা নিবন্ধন অধিদপ্তর। অথচ সরকারের উর্ধ্বতন মহলগুলো সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কিছু অনিয়ম হয় আমলে নেয় না।

    ‎ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল খোরশেদের অফিসে চলছে নিয়মিত দলিলবাণিজ্য। দলিল লেখক থেকে শুরু করে সাব রেজিস্ট্রার পর্যন্ত এক অভিন্ন দুর্নীতির চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জমির মূল্য পরিশোধের পর নিরুপায় ক্রেতাকে বৈধ-অবৈধ দু’খাতে টাকা দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে দলিল সম্পাদনকালে দিতে হয় ‘অফিস খরচ’। কথিত ওই অফিস খরচই হলো সাবরেজিস্ট্রারের নির্ধারণ করা ঘুষ। সরকারি ফি পরিশোধের পর ওই অফিস খরচ দিয়েই এখন সাধারণ মানুষজনকে দলিলপত্র রেজিস্ট্রি করতে হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতির নেতাদের সখ্যতায় ঘুষের আখড়া বসেছে এই অফিসটিতে।

    ‎গত ১০ই অক্টোবর, ২০২৩ ইং তারিখে ইমরুল খোরশেদ কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদানের পরপরই ঘুষ বাণিজ্যের নতুন পন্থা অবলম্বন করে দুর্নীতির রামরাজত্ব তৈরি করে। জমি সংক্রান্ত এমন কোনো কাজ ছিলো না যে কাজের জন্য সে ঘুষ নেয় নি- এমনটাই অভিযোগ করেছে সেবাগ্রহীতারা।

    ‎কথিত ইমরুল খোরশেদের নিজ জেলা শরীয়তপুরের জাজিরায় হওয়াতে, মাদারীপুরের সন্তান আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন নাছিমের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সাথে সখ্যতা করে নিবন্ধন অধিদপ্তরে দলিল বাণিজ্যের পাশাপাশি পদবাণিজ্যে এগিয়ে ছিলেন। নিজ জেলায় নামে বেনামে করেছেন অঢেল সম্পদ। এছাড়াও নিজ খরচে প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য আমেরিকা গমন করেন।

    ‎ইমরুল খোরশেদের সাজানো গুছানো ‘অফিস সিস্টেম’ অনুসারীরা সিস্টেম পলিসি পন্থা অবলম্বন করে ওপেন সিক্রেটে অফিস খরচের নামে চলছে হরিলুট।

    ‎সরকার নির্ধারিত রেজিস্ট্রি ফির বাইরেও দলিল বাবদ মৌজার রাউন্ড ফিগারে প্রতি লাখে ১ শতাংশ অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে। পরে এই টাকার বেশির ভাগ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। বাকি অংশ যায় দলিল লেখক সমিতিতে। কয়েকজন দলিল লেখকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে অফিশিয়াল ঝামেলা মেটানোর নামে যে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়, তাকেই সেরেস্তা খরচ বলা হয়। অফিসের সঙ্গে দলিল লেখক সমিতির নেতাদের যোগসাজশ থাকার কারণেই অবৈধ সেরেস্তা খরচের টাকা আদায় বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বদনাম হচ্ছে সাধারণ দলিল লেখকদের।

    ‎উক্ত দপ্তরে দলিলবাণিজ্য চক্রের মধ্যে অফিস সহকারী মো: মুলসীমানীয়, জালাল উদ্দিন, ফারুক, সেলিম, কাওছার, দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেন্টু, সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ আরও বেশ কয়েক। পরবর্তীতে প্রতিবেদনে সকলের তালিকা উল্লেখ করা হবে।

    ‎এ প্রসঙ্গে সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল খোরশেদকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করে পাওয়া যায়নি।

    আরও খবর

    Sponsered content