• বিশেষ সংবাদ

    তদবিরে বদলায় সিদ্ধান্ত, ৬ বছর বয়সে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা

      বিশেষ প্রতিবেদক ১৩ মে ২০২৫ , ৯:৪১:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    অনিয়মে জর্জরিত শরীয়তপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার

    শরীয়তপুর জেলার সদর সাব রেজিস্ট্রার মো: ওমর ফারুক। অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের পর থেকে অর্থের বিনিময়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করে দলিল রেজিস্ট্রি করে আসছেন।

    মো: ওমর ফারুকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ১৫ জুন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিলো ৬ বছর। ২০০৯ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে ব্যাপক আধিপত্য ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পদায়ন বাগিয়ে নেন।

    মাত্র ৬ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধা, এত অল্প বয়সেও তারা মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। ২০১০ সালে আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে ১৯০ জন মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীকে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগের লক্ষ্যে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়।

    কমিটি যাচাই-বাছাই করে এই ১৯০ কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৩০ জনকে প্রকৃত মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে তৎকালীন আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে এই কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রায় সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সবাই সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, ধানমন্ডি সাব রেজিস্ট্রার অফিস ও ২০২২ সালে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে যোগদানের পরপরই তৎকালীন ওই সময়ে অবাধে কৌশলে ঘুষের রাজ্যত্ব কায়েম করা এই সাব রেজিস্ট্রার জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি, নির্ধারিত ফিসের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মূল দলিলের নকল উত্তোলন করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়, মূল দলিলে গ্রহীতার নাম পরিবর্তন করে দেয়াসহ নানা অপকর্মের মহোৎসবের কায়েম রাজত্ব করেছে ওমর ফারুক। গতবছরের ১৯ ডিসেম্বর শরীয়তপুর সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে বদলী হলে এখানে এসেও থেমে নেই মো: ওমর ফারুক। সম্প্রতি একটি অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মাদারীপুর শাখার সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযোগ ছিল, সেবাগ্রহীতাকে জিম্মি করে অবৈধভাবে অর্থ আদায়, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি, নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মূল দলিলের নকল উত্তোলনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়, টাকার বিনিময়ে মূল দলিলের নকল কপিতে ভুয়া গ্রহীতার নাম লিখে নকল সরবরাহ করা, নকলের সার্টিফায়েড কপি অফিসে জমা না দিয়ে ভুয়া কেস নাম্বার দিয়ে গ্রাহকের নিকট সরবরাহ করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা।

    সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানায়, প্রতি দলিলের ক্ষেত্রে উল্লিখিত জমির মোট মূল্যের ওপর ০.৫ শতাংশ টাকা অফিসকে দিতেই হবে।

    সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে অনেকাংশে দলিলের রেজিস্ট্রি কম। অথচ এরই মধ্যে নকলনবীশ, দলিল লেখকদের সিন্ডিকেটে সাধারণ মানুষ জমির দলিলে অতিরিক্ত খরচ গুনছে।

    এ বিষয়ে সাব রেজিস্ট্রার মো: ওমর ফারুক’কে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

    শুধু তাই নয়, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মো: ওমর ফারুক ১ বছর বেশি চাকুরীকাল সময় শেষে আগামী ১৪ই জুন অবসর গ্রহন করবে। এ নিয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।

    আরও খবর

    Sponsered content