• বাংলাদেশ

    যোগ বিয়োগের কারসাজি, মানিক সিন্ডিকেটের রোষানলে জিম্মি ফরিদগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিস

      নিজস্ব প্রতিবেদক ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১:২২:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    আধার রাতের নৈশ-প্রহরী, দিনের আলোয় ফাইল প্রসেস মাস্টার। নাম মাঈন উদ্দিন মানিক, চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে নিয়োজিত। অথচ রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিনের দলিলে নির্দিষ্ট মূল্যের অতিরিক্ত টাকা দরহাকানোর মূল ভূমিকার দায়িত্ব পালন করে মানিক। যদিও এর নেপথ্যে দপ্তরের কর্মকর্তা, অফিস সহকারী, নকল নবিশ ও রুহুল আমিনের মতো একাধিক অসাধু দলিল লেখকরা। 

    উপজেলার নিম্ন আয়ের থেকে মধ্য আয়ের সাধারণ মানুষ সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের ব্যয় করে দলিল সম্পাদনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। ঘুষের বিকল্প শব্দে উচ্চারণ হয় ফিস দিচ্ছি। অফিসের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ফি আদায়ের তালিকা টানানো থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তালিকায় বিভিন্ন প্রকৃতির দলিলের মধ্যে সাফ-কবলা, হেবা ঘোষণাপত্র, দানপত্র ও বন্ধকী দলিল সম্পাদনের জন্য পৃথক ফি উল্লেখ রয়েছে। অথচ জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে ‘অফিস খরচ, সাব রেজিস্ট্রার খরচ’ ইত্যাদির নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এমনকি দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতি নেতাদের সখ্যতায় সেরেস্তা খরচের নামেও নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। পাশাপাশি কাগজপত্রে বিন্দুমাত্র ভুল পেলে যেন ঘুষের মাত্রাও বেড়ে যায়। কখনো কখনো ভুলের মাত্রা নিজেদের ইচ্ছাকৃত অনুযায়ী হয়ে থাকে। 

     সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ‘নৈশ্য প্রহরী মাঈন উদ্দিন মানিক দলিল সম্পাদনার প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন খরচ ক্লিয়ারেন্স না দিলে সাব রেজিস্ট্রার মো: তানভীর আলম সই করেন না’। অনুসন্ধানে প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

    গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ৬৯৭৪ নং দলিলে দাতা ফাতেমা বেগম ৩ শতাংশ, জাকিয়া বেগম ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও খাদিজা বেগম ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ৮ দশমিক ১ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রি করেন। কিন্তু দলিলের গ্রহীতা কলামে রহস্যজনকভাবে ০.১৮১০ একর উল্লেখ করা হয়। ওইদিনই দলিলের নকল কপি সংগ্রহের পর জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আসে। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, এই দপ্তরে দাগ, খতিয়ান কিংবা নির্ধারিত মৌজার পরিবর্তে অন্য মৌজা দেখিয়ে কিংবা নাল সম্পত্তি দেখিয়ে বহুতল ভবনের দলিল সম্পাদনের ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরবর্তীতে দাতা ও গ্রহীতার সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হলে দলিল লেখক রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, ‘টাইপিং ভুল হয়েছে তবে সংশোধন করতে সময় ও কিছু খরচ লাগবে’ অর্থাৎ (২ সপ্তাহ সময় লাগবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগবে)। 

    এদিকে দলিল সংশোধনকান্ডে দপ্তরের নৈশ প্রহরী মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘মাত্র ৪ হাজার টাকায় সংশোধন সম্ভব’। 

    বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত রেজিস্ট্রেশন বিভাগ। এনবিআরের পরেই এর অবস্থান। ৫ই আগস্ট বিপ্লবের পর বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে যেখানে সংস্কার চলছে বড় চ্যালেঞ্জিং নিয়ে। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও সংস্কারের নামে ঘুষবাণিজ্যে মাতোয়ারা কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। 

     মো: তানভীর আলম ২০২১ সালে সাব-রেজিস্ট্রার পদে কর্মস্থলে যোগদানের পর গোসাইরহাট, শরীয়তপুর/ বারহাট্টা, নেত্রকোনায় কর্মস্থলের সুযোগ হলে পরবর্তীতে ০২-০৩-২০২৫ ইং তারিখে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বদলী আদেশ হয়।

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাঈন উদ্দিন মানিকের এসকল অপকর্ম ঢাকতে ঢাকার একটি পত্রিকা অফিসের সাংবাদিককে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য গত মাসে সাব রেজিস্ট্রার তানভীর আলম ম্যানেজ করে। যার সমস্ত প্রমাণ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

    তবে এ সকল বিষয়ে সাব রেজিস্ট্রার তানভীর আলম বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

    আরও খবর

    Sponsered content