
বিশেষ প্রতিবেদক ২৬ আগস্ট ২০২৫ , ৪:০৯:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশালের গৌরনদী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে জমির দলিল সম্পাদনে দীর্ঘদিন ধরে গলাকাটা ফির নামে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম এখানেই শেষ নয় প্রকাশ্যে চলে ঘুষ আদান প্রদান। কাগজপত্রে বিন্দুমাত্র ভুল পেলে যেন ঘুষের মাত্রা বেড়ে যায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ হয়না এই অফিসে।

জানা যায়, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মোহরার , অফিস সহায়ক, দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতির সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে উপজেলার নিম্ন আয়ের থেকে মধ্য আয়ের সাধারণ মানুষ সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের ব্যয় করে দলিল সম্পাদনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। অফিসের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ফি আদায়ের তালিকা টানানো থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তালিকায় বিভিন্ন প্রকৃতির দলিলের মধ্যে সাফ-কবলা, হেবা ঘোষণাপত্র, দানপত্র ও বন্ধকী দলিল সম্পাদনের জন্য পৃথক ফি উল্লেখ রয়েছে। তারপরও উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নৈশ্য প্রহরী স্বপন হাওলাদার দলিল সম্পাদনার প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন খরচ ক্লিয়ারেন্স না দিলে সাব রেজিস্ট্রার মোঃ জহিরুল হক সই করেন না। অনুসন্ধানে প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি বলেন, ‘স্যারকে দলিল প্রতি মৌজা রেট অনুযায়ী দিতে হবে ১ থেকে ১.৫ শতাংশ টাকা। অর্থাৎ ১ কোটি টাকা দলিলে অতিরিক্ত সাব রেজিস্ট্রারকে খুশি করা বাবদ দিতে হবে ১ লক্ষ্য টাকার বেশি।
এছাড়াও দলিল লেখক সমিতির সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম কাছে একটি দলিল সম্পাদনার খরচ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার দলিলে স্যারের খরচসহ সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। তবে এর মধ্যে সেরেস্তা খরচও জড়িত’।
একই দলিল সম্পাদনার জন্য অফিস সহায়ক মোঃ ফারুক হোসেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
সাব রেজিস্ট্রার মোঃ জহিরুল হকের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে অফিস সহকারী সেলিনা আক্তার। দলিল সম্পাদনের জন্য অতিরিক্ত খরচ কমানোর আশ্বাস দিয়ে সাব রেজিস্ট্রারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথা বলার সময় নির্ধারণ করে দেন অফিস সহকারী সেলিনা আক্তার।
সাব রেজিস্ট্রার জহিরুল হকের নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জে। ২০২৪ সালে জুন মাসের ৯ তারিখে চাকরিতে প্রবেশ পদে যোগদানের পর প্রথম পদায়ন হিসেবে বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার দায়িত্বে ১ লা জুলাই, ২০২৪ ইং তারিখ কর্মস্থলে যোগদান করেন প্রাপ্য গ্রেড- সি ক্যাটাগরিতে। চাকরির মেয়াদ ৩২ বছরের মধ্যে ১ বছর যেতে না যেতেই অনিয়ম করতে দিশেহারা হয়ে উঠেছে। অথচ ২০১৭ থেকে যেসকল সাব রেজিস্ট্রার চাকরিতে যোগদান করেছে, বেশিরভাগই ডিপার্টমেন্টের সংস্কার নিয়ে ভাবলেও ২০২৪ সাল চাকরিতে যোগদান করা জহিরুল হকের মতো অসাধু কর্মকর্তারা জনগণকে ভোগান্তি করেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও অনিয়ম দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিনত হওয়া গৌরনদী সাব রেজিস্ট্রার অফিস। বিশেষ করে অবৈধ লেনদেন গুলো হয়ে থাকে নিয়োগ বহির্ভূত উমেদার ও অফিস সহকারীর মাধ্যমে। দাতা/গ্ৰহিতার মধ্যে জমির প্রকৃত বিনিময় মূল্য বেশি হলেও তা সাব-রেজিস্টার ও দলিল লেখকদের সহায়তায় কম দেখানো হয়। যে কারনে প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এইসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সাব রেজিস্ট্রার মোঃ জহিরুল হক কে পাওয়া যায়নি।
উপরুক্ত অনিয়ম অতিরিক্ত খরচ আদায়ের স্বচিত্র অনুসন্ধানী টিমের নিকট রয়েছে যা পরবর্তী ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হবে।

















