• বিশেষ সংবাদ

    কর্মস্থলে যোগদান করেই অনিয়মে দিশেহারা বকশীগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান

      বিশেষ প্রতিবেদক ২৬ আগস্ট ২০২৫ , ১০:১০:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনে দেশে ভূমি হস্তান্তর দলিলের নিবন্ধন করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে সাব রেজিস্ট্রার আইন অনুযায়ী ভূমি নিবন্ধনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন, যার জন্য রয়েছে তার নিজস্ব দপ্তর। জনগুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তর নিয়ে ‘ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক’ এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। আলোচিত গবেষণাটিতে তুলে ধরা হয়েছে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের বাস্তব চিত্র, যেখানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করাতে পারেন না সেবাগ্রহীতারা।

    দলিল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, স্থানীয় রাজনৈতিক ও নানাবিধ প্রভাব বিস্তার, সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি নানা কৌশলের ফাঁদে ফেলে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার মতো সুস্পষ্ট তথ্য উপাত্ত রয়েছে উক্ত প্রতিবেদনে।

     

    মাঠ পর্যায়ে যার স্বাক্ষ্য দিচ্ছে দুর্নীতির আতুর ঘর খ্যাত জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ কতিপয় দালালদের নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের কালো থাবায় পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। এদের সাথে মানুষ হয়রানীতে আরও যোগ হয়েছে অসাধু কিছু দলিল লেখক।

    ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সরকারি ফির বাইরেও জমির মূল্যের দশমিক ৫ শতাংশ ( প্রতি লাখে ৫%) অর্থ দিতে হবে সাব-রেজিস্ট্রারের জন্য। অর্থাৎ জমির মূল্য ১ কোটি টাকা হলে সাব-রেজিস্ট্রারের জন্য নেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।

    একইভাবে অন্যান্য সেবাখাতেও দিতে হয় কমিশন, আছে সেবা অনুযায়ী নির্ধারিত অংক! অদৃশ্য এই অনৈতিক অর্থ আদায়ের তালিকা পরিণত হয়েছে নিজস্ব নিয়মে।

    মুজিবুর রহমান ২০১৭ সালে সাব-রেজিস্ট্রার পদে কর্মস্থলে যোগদানের পর সুবর্ণচর, নোয়াখালী/ টেকনাফ, কক্সবাজার / পলাশ, নরসিংদী / রামু, কক্সবাজার / সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ কর্মস্থলের সুযোগ হলে পরবর্তীতে ১০-০৪-২০২৫ ইং তারিখে বকশীগঞ্জ উপজেলায় বদলী আদেশ হয়। যখনই যেখানে দায়িত্বরত ছিলেন তখনই কৌশলে দুহাতে কামিয়েছেন বিপুল অর্থ।

    প্রতি দলিলে অফিস খরচের নামে অতিরিক্ত টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে বণ্টন হয়ে যায়। টাকা না দিলে দলিলে ইচ্ছা করে ভুল করা কিংবা দলিল আটকে রেখে হয়রানির ঘটনাও ঘটে।

    সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের উমেদার, অফিস সহকারী, মোহরার ও দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতি নেতাদের সখ্যতায় শক্তিশালী সিন্ডিকেটে গড়ে উঠেছে। কাগজপত্রে বিন্দুমাত্র ভুল পেলে যেন ঘুষের মাত্রাও বেড়ে যায়। নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ হয় না এই অফিসে।

    নাম না প্রকাশ করার শর্তে কিছু দলিল লেখক জানান, দলিল রেজিস্ট্রির সরকারি ফি ব্যতীত অফিস খরচের নামে বাড়তি টাকা দিতে হয়। অতিরিক্ত টাকা না দিলে তাঁরা দলিলে অযৌক্তিকভাবে নানা ভুল দেখিয়ে হয়রানি করেন। অতিরিক্ত খরচের অর্ধেকাংশ ভাগ জমা হয় সাব-রেজিস্ট্রারের নামে। দলিল রেজিষ্ট্রেশন আইন সম্পর্কে জনসাধারণের অজ্ঞতার সুযোগে দলিল নিবন্ধনে ঘুষ বাবদ আদায় করা অর্থ ভাগ করে নেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কালো সিন্ডিকেটভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, দলিল লেখক ও সংশ্লিষ্ট দালালেরা।

    অভিযোগ আছে, সাব রেজিস্টার মুজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার দায়িত্ব থাকা অবস্থায় সেবাগ্রাহকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অফিস খরচ ও কন্ট্রাকে পাওয়ার হেবা দলিল করতো, কারন সেখানে উৎস কর অধিকহারে থাকার অধিকাংশই হেবা দলিল সম্পাদন হতো। তবে সোনারগাঁ উপজেলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা হওয়ায় ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর, সোনারগাঁ যোগদানের পরপরই ফ্যাসিস্ট সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের সাথে যোগসাজশে কমার্শিয়াল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল দলিলগুলো সাব কবলা রেজিস্ট্রি, হেবা দলিল করে বিপুল সম্পদের মালিক বনেছে। একই কর্মকর্তা ৫ই আগস্টের পর ভোল পালটে দাপটের সঙ্গে এখনো বহাল তবিয়তে। শুধু তাই নয়, অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সখ্যতায় মোটা অংকের টাকা ম্যানেজ করে সম্প্রতি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় বদলী হয়েছে।

    ওয়েবসাইটের তথ্য গড়মিল:

    দপ্তরের করুণ অবস্থার পাশাপাশি বেহাল দশা দেখা গেলো গুরুত্বপূর্ণ জনদপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইটে। কর্মকর্তা তালিকায় ব্ল্যাংক্নপেজ, অথচ এ যাবৎকালে একাধিক সাব রেজিস্ট্রার দায়িত্ব পালন করছেন।

    এসব বিষয়ে মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি, সর্বশেষ তাকে মেসেজ দিয়েও রিচ করা সম্ভব হয়নি।

    আরও খবর

    Sponsered content