• বাংলাদেশ

    চুয়েট ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি গনপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসানকে চট্টগ্রাম বিভাগ-৪ প্রাইজ পোস্টিং

      নিজস্ব প্রতিবেদক ৩ নভেম্বর ২০২৫ , ৩:২০:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    ‎গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তর বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ ও তার সংস্কার কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়টির উপর নজরদারী ও ক্ষমতার ভাগ বসাতে দেশের ক্ষমতাশীলরা সর্বদাই তৎপর থাকে। এই মন্ত্রণালয় ঘিরে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ সম্পাদন হয়। আর এ কারণেই এই মন্ত্রণালয়টি অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের নিকট।

    ‎গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে এর সাথে সম্পৃক্ত ঠিকাদার ও কিছু দুর্নীতি পরায়ণ প্রকৌশলী শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। এই কার্যক্রম অতীতেও ছিলো এবং বর্তমানেও চলমান আছে। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মূল ভুমিকার কর্তারা জড়িত। কর্তাদের পুজি করেই কিছু প্রকৌশলী হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। তার মধ্যে অন্যতম চট্রগ্রাম বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মেহেদী হাসান।

    ‎গোপালগঞ্জ কোটায় সচিব হওয়া (বর্তমানে অবসর) শেখ হাসিনার দুর্নীতি মামলার কেস পার্টনার কাজী ওয়াছিউদ্দিনের ভগ্নিপতি। শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবিরের একান্ত বিশ্বস্ত খ্যাত মো: মেহেদী হাসান গোটা আওয়ামী লীগ আমলে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জোনে দায়িত্বরত ছিলেন। এছাড়াও রাজনৈতিক পরিচয় হিসেবে তিনি চুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

    ‎মেহেদী হাসানের পিতা গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোঃ মহাসীন মোল্ল্যা কায়েস। কাশিয়ানি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের বিপরীতে রয়েছে কায়েস চেয়ারম্যান মার্কেট, ঢাকা খুলনা মহাসড়কের পাশে কাশিয়ানীতে কায়েসের ইটের ভাটাও এবং এই মার্কেটের পেছনেই তার বাসা। মেহেদীর স্ত্রী কাজী রুকাইয়া সুলতানা বিসিএস ট্যাক্স ক্যাডারের একজন সদস্য এবং সাবেক গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াসিউদ্দীন এর ছোট বোন। সে সুবাদে মাহেদী ছিলেন সচিবের বোন জামাই। ফলে গণপূর্তে একটা সময় এই মেহেদীর প্রভাব ছিল অকল্পনীয়। এছাড়াও বিএসএমএমইউ এর সাবেক ভিসি এবং অসংখ্য দূর্নীতির ঘটনার নায়ক অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার চাচা শেখ কবির ছিলো তার নিকটাত্মীয়। হাসিনার চাচা শেখ কবির’কে গণপূর্তের ঠিকাদারি কাজে অর্ন্তভুক্ত করা এবং তার ঠিকাদারী সকল কাজকর্ম দেখভাল করা ছিলো মেহেদীর অলিখিত দায়িত্ব। এছাড়া ২০১৩ সালে ৩২তম বিসিএসে সঃপ্রঃ হিসেবে গণপূর্ত কাঠের কারখানা বিভাগ, একই বছরের ডিসেম্বরে গণপূর্ত কাঠের কারখানা বিভাগ থেকে শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগে, ২০১৪ এর নভেম্বরে শরীয়তপুর থেকে বরিশাল উপ-বিভাগ-১, ২০১৬ আগস্টে শেরে বাংলা নগর উপ-বিভাগ-৪ উঃবিঃপ্রঃ, ২০১৭ ডিসেম্বরে মিরপুর উপ-বিভাগ-৩ উঃবিঃপ্রঃ (প্রায় ৬ বছর একই চেয়ারে), ২০২৩ সালের অক্টোবরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদোন্নতি এবং প্রথম পদায়ন শেরে বাংলা নগর বিভাগ- ২, ২০২৪ সালে স্বৈরাচার হাসিনা পতনের পর প্রধান প্রকৌশলীর সহায়তায় গবেষণা ও উন্নয়ন ইউনিটে স্বেচ্ছায় পদায়ন।

    ‎সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শামীম আখতার, স্বৈরাচার শাসনামলে সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী এই প্রকৌশলীকে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ দিয়ে ফ্যাসিস্টদের পুর্ণবাসন করতে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ- ৪ বদলি করা হয়।

    ‎অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের চেইন অব কমান্ডদের হাই সিকিউরড ভাবে ম্যানেজ করে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ- ৪ বদলি করার পেছনে বিশেষ কিছু লক্ষ্য উদ্দেশ্য রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই নিয়োগের মূল লক্ষ্যই হলো UCC Infrastructure Ltd- এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রিজওয়ান মোস্তাফিজ এর ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের চট্টগ্রাম করভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি তার কোম্পানির আওতায় আনা। শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর এক্সেন আতিকুল ইসলাম আতিক যিনি দীর্ঘদিন ধরে গণপূর্তের টেন্ডার সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তারই পরামর্শে প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানকে মেহেদীর ফ্যাসিবাদী কানেকশন এর ব্যাপারে অন্ধকারে রেখে নাটকীয় এই পদায়ন ঘটানো হয়েছে।

    ‎এদিকে ঘটনার অন্তরালে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর এক্সেন আতিকুল ইসলাম আতিকের নেতৃত্বে অনেকদিন ধরে চলে আসছে গণপূর্তে টেন্ডারবাজির সিন্ডিকেট। কিছুদিন পূর্বে ৪০০ কোটি টাকা প্রকল্প মূল্যের চট্টগ্রাম করভবন নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে পাস হলে আতিক তার টেন্ডারবাজীর কাজটি সূচারুরূপে করার জন্য তার সিন্ডিকেটে একজন সদস্য খুজছিলো। গোপন সূত্রে জানা যায়, গণপূর্ত ও সড়ক বিভাগের টেন্ডার সিন্ডিকেটের হোতা NDE এর সাবেক চেয়ারম্যান রায়হান মোস্তাফিজ ও রেজওয়ান মোস্তাফিজ ব্যাংকের লোনের টাকা মেরে দিয়ে NDE কে মাহাবুব গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। রেজওয়ান মোস্তাফিজ এখন UCC Infrastructure Ltd এর শেয়ার কিনে কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে অসীন হয়েছেন। তারিক সিদ্দিকী ও এনএসআই এর সাবেক ডিজি টিএম এম জুবায়ের না থাকলেও টেন্ডার সিন্ডিকেট এ তাদের আশা ভরসা এখন আতিক। তাই আতিক এর পরামর্শে রেজওয়ান মোস্তাফিজ এর কলকাঠির মাধ্যমেই মেহেদীর চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ ৪ এ পদায়ন।

    আরও খবর

    Sponsered content