• বাংলাদেশ

    ফ্যাসিবাদ উৎখাতের যুদ্ধে জীবন বাজি রেখেছিলাম : জাবির আহমেদ জুবেল

      মোতাহার হোসেন ১৭ জুলাই ২০২৫ , ১১:৩৩:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধ্যায়। আর সেই অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে সরাসরি নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন জাবির আহমেদ জুবেল। তিনি জানান, এটি শুধু একটি ছাত্র আন্দোলন নয়, বরং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জনতার প্রাণপণ লড়াই।

     

    জাবির আহমেদ জুবেলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী জুবেল ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। এসব আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

     

    সুনামগঞ্জের হাওরপাড় থেকে উঠে আসা এই তরুণ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই প্রত্যক্ষ করেন শিক্ষাঙ্গনে দমনমূলক রাজনীতি এবং ফ্যাসিবাদী শাসন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সর্বশেষ স্বৈরাচার পতনের অভ্যুত্থান পর্যন্ত তার সরব ও সাহসী উপস্থিতি তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আন্দোলনের নানা দিক, অভিজ্ঞতা আর গল্প তুলে ধরেছেন তিনি।

     

    বাসস: আপনি বর্তমানে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত? রাজনীতিতে কীভাবে এলেন?

     

    জাবির আহমেদ জুবেল: আমি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি।

     

    স্কুল-কলেজে পড়াশোনার সময় থেকে রাজনীতি, ইতিহাস ও সমাজ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা জন্মে। প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলে জন্মের ফলে সমাজের শ্রেণি বৈষম্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। সেই থেকে সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ছিলাম। ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম এক বছর ছিল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমার আবাসনের স্থান হয় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের টিনশেডের ২০ নম্বর রুমের গণরুমে। এক রুমে ৩০ জন গাদাগাদি করে থাকতে হতো। একদিনের মধ্যে আবিষ্কার করি হলে থাকতে হয় মূলত ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক পরিচয়ে সেখানে কোনো শিক্ষার্থীর নেই। রাত দশটা হলেই ম্যানার শেখার নাম করে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং প্রতিবাদী মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার রাজনৈতিক টর্চার চালাত হলের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক ছাত্রলীগ। সকাল হওয়ার পরই চলত বাধ্যতামূলকভাবে তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ।

     

    এগুলো দেখেই আমার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ইতিহাস পাঠের পূর্বের ধারণার আমূল পরিবর্তন হয়। মুক্তচিন্তা চর্চা ও গণমানুষের পক্ষে অবস্থানকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি আবিষ্কার করি এক বদ্ধ কূপ এবং ভিন্নমতকে নিপীড়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে।

     

    ক্লাস শুরুর কিছুদিনের মাথায় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত প্রগতিশীল এবং বামপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর মারাত্মক হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতারা। সেদিনের ঘটনা মনের গভীরে রেখাপাত করে। ছাত্রলীগের ও আওয়ামী লীগের দখলদারিত্বের রাজনীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে যায়।

     

    কয়েক মাসের মধ্যেই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে শুরু থেকেই তাতে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের বাধা দেওয়া শুরু হয়। তা উপেক্ষা করে হলের প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের বহু শিক্ষার্থী আন্দোলনে ভূমিকা পালন করে। আমিও তখন সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। এক পর্যায়ে আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা শুরু হয়। আমি ওই হামলায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হই। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ওই বছরই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করি। সেবারও সায়েন্স ল্যাবে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হই।

     

    প্রথম বর্ষের এই দুটি আন্দোলন আমাকে আরো রাজনৈতিক করে তোলে। জনগণের পক্ষের সংগঠিত ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে ভাবনা তৈরি হয়। সংগঠিত হওয়া ছাড়া দেশের মানুষের ওপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা ফ্যাসিস্ট ক্ষমতাকাঠামো পরিবর্তন সম্ভব নয়-এটা নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপর মনে হলো, কিছু একটা করতে হবে, এভাবে চলতে পারে না দেশটা, পরিবর্তন খুব জরুরি। এই ভাবনার মধ্যেই যন্ত্রণার এক সময় পার করতে হয়। প্রথম বর্ষের শেষদিকে, অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসের এক মধ্যরাতে তখনকার বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন খানকে ফেসবুকে নক দিয়ে নিজের ভেতরকার দ্বন্দ্ব এবং যন্ত্রণার কথা জানাই। বলি, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে চাই। পরদিন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে লড়াইয়ের পথচলা শুরু করি। তারপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।

    আরও খবর

    Sponsered content